নারীদের নামের শেষে ‘খাতুন’ লেখা হয় কেন..?

 নারীদের নামের শেষে ‘খাতুন’ লেখা হয় কেন..?

Image...


মুফতি মাহফুজ তানিম

‘নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কী হয়’—পঙিক্তটা অনেকাংশে সত্য হলেও সুন্দর অর্থবোধক, মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন নামের প্রভাবও গৌণ নয়।

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে, তোমাদের ও তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো।
( ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ইবনু আবূ যাকরিয়া (রহঃ) আবূ দারদার (রাঃ) সাক্ষাৎ পাননি। )

{ দুর্বল: ( সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৪৮ ) ( মিশকাত, হাদিস নং ৪৭৬৮ ) ( যঈফাহ, হাদিস নং ৫৪৬০ ) }

তেমনি নামের শুরুতে বা শেষে বিভিন্ন উপাধিও আমরা যুক্ত করি, সেগুলোও সুন্দর অর্থবহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাক-ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের নামের শেষে ‘খাতুন’ যুক্ত করা হয়। এ শব্দটির অর্থ, উৎপত্তি ও ব্যবহার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিই।

বিখ্যাত আরবি অভিধান আল মুজামুল ওয়াসিতে এসেছে, ‘খাতুন’ মূলত তুর্কি ভাষার শব্দ। এর বহুবচন খাওয়াতিন। এটি তুর্কি শব্দ খান বা খাকানের স্ত্রীলিঙ্গ। আর খান শব্দের অর্থ অভিজাত ব্যক্তি, শাসক ইত্যাদি।

বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, খান বা খাঁ একটি উপাধি, যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তিগতভাবে মঙ্গোলীয় ও তুর্কি ভাষায় এর অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক। খান বলতে গোত্রপতিও বোঝায়।

খাতুন ও খানম হলো এর স্ত্রীবাচক রূপ। সে হিসেবে খাতুন মঙ্গোলীয় ও তুর্কিতে রাজার রানি সমপর্যায়ের শব্দ। খান ও খাতুন হিসেবে ঘোষণার পর এই উপাধি দ্বারা একজন খানের রাজরানি (স্ত্রী) খানের সমপর্যায়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য হন।

বাংলা একাডেমির ব্যাবহারিক বাংলা অভিধানে ‘খাতুন’ শব্দের অর্থ গৃহিণী, অভিজাত মহিলা ইত্যাদি।

আরবি নামকোষ ‘আল মাউসুয়াতুল আলামিয়্যাতে’ ড. মাহমুদ আল আক্কাম বলেন, সেলজুক শাসনামলে ‘খাতুন’ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। তখনকার সেলজুক সুলতানদের স্ত্রীদের খাতুন নামে ডাকা হতো, যেমন খাতুনে সুলতান সোলায়মান।

তবে এর আগে ৭০০ হিজরির শুরুতে তুর্কিদের সঙ্গে আরবদের মেলামেশা শুরু হলে আরবদের মধ্যেও খাতুন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। যেমন: বিখ্যাত আব্বাসী খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রীর নাম ছিল জুবাইদা খাতুন।

পরবর্তী সময়ে কালের পরিক্রমায় খাতুন শব্দটি তুর্কিদের সূত্র ধরে ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। মোগল শাসনামলে ফার্সি ভাষায় খাতুনের অনুপ্রবেশ ঘটে।

তখন এই শব্দটি অভিজাত মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় উর্দু ও বাংলা ভাষায় তুর্কি খাতুন শব্দটি ঢুকে পড়ে। এখানকার নারীদের নামের পরে খাতুন শব্দের ব্যবহার অনেক লক্ষ করা যায়।

তবে এ খাতুন শব্দ নামের শেষে যুক্ত করার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বিধি-নিষেধ নেই। আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া তথা কুয়েতের ফিকহবিষয়ক বিশ্বকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ইসলামে নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে, নবজাতকের যেকোনো নাম রাখা জায়েজ, যদি শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে।
( আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৩৩১ )

তা ছাড়া ভালো অর্থবোধক নাম রাখা এটাও ইসলামের শিক্ষা। এর ফলে সেই ভালো অর্থটি নবজাতকের মধ্যে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে ‘তাফাউল’ বলা হয়।

No comments

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.