যে আমল করলে মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
যে আমল করলে মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে
বিনা হিসাবে জান্নাত পাওয়া মহান আল্লাহ তা'আলার অন্যতম নেয়ামত গুলোর মধ্যে একটি। যারা সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন, হাদিসে মধ্যে তাদের বর্ণনা এসেছে। কী আমলের বিনিময়ে কারা সবার আগে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবেন? তাদের লক্ষণই বা কী হবে? এ সম্পর্কে বিশ্বনবীই বা কী বলেছেন?
হ্যাঁ, হাদিসের বর্ণনায় সর্বপ্রথম জান্নাতি মানুষদের বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবী। আবার কী আমলের বিনিময় এরা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন তাও উল্লেখ করেছেন।
হাদিসে এসেছে,
- আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, আমার উম্মাত থেকে কিছু লোক দল বেঁধে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সংখ্যা সত্তর হাজার। তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত জ্বল জ্বল করবে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৫৪২, ও মুসলিম)
- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দল পূর্ণিমা চাঁদের মত উজ্জ্বল আকৃতিতে প্রবেশ করবে। অতপর (পরবর্তী দল হিসেবে) প্রবেশ করবে আকাশের সবচেয়ে দীপ্তিমান তারকার সুরতে। সেখানে তারা পেশাব-পায়খানা করবে না। থুতু ফেলবে না। নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনিগুলো হবে স্বর্ণের। ঘাম হবে মিশক আম্বরের মত সুগন্ধি। তাদের ধুপ হবে চন্দন কাঠের এবং স্ত্রীগণ হবে ‘হূরুলঈন’ (আয়তলোচন চির কুমারী হুরগণ)। সবার আকৃতি হবে তাদের বাবা (হজরত আদম আলাইহিস সালামের) মত। ষাট হাত লম্বা।’
(বুখারি, মুসলিম)
- অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘(জান্নাতে) তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের, তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের দরুন মাংসভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না। পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর একটি অন্তরের মত হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবিহ পাঠে রত থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বিনা হিসাবে কারা জান্নাতে যাবে এবং তাদের আমল কী হবে, এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ এক হাদিস বর্ণনা করেন। তাতে ওঠে এসেছে,
- ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আগের উম্মাতদের আমার সামনে পেশ করা হয়। কোন নবী তাঁর বহু উম্মাতকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। কোন নাবীর সঙ্গে অপেক্ষকৃত ছোট দল। কোন নাবীর সঙ্গে আছে দশজন উম্মাত। কোন নাবীর সাথে আছে পাঁচজন আবার কোন নবী একা যাচ্ছেন। দৃষ্টি দিতেই, হঠাৎ দেখি অনেক বড় একটি দল। জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিব্রীল! ওরা কি আমার উম্মাত? তিনি বললেন, না। এটি হল মুসা (আঃ) ও তাঁর উম্মতের জামাআত। তবে আপনি শেষ প্রান্তের দিকে তাকিয়ে দেখুন! আমি দৃষ্টি দিলাম : হঠাৎ দেখি অনেক বড় একটি দল। তিনি বললেন, ওরা আপনার উম্মাত। আর তাদের অগ্রবর্তী সত্তর হাজার লোকের কোন হিসাব হবে না, তাদের কোন আযাব হবে না। আমি বললাম, কারণ কী! তিনি বললেন, তারা শরীরে দাগ লাগাত না, ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিত না এবং শুভ অশুভ লক্ষণ মানত না। আর তারা কেবল তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করত।
তখন উক্কাশা ইব্নু মিহসান নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি আমার জন্য দু‘আ করুন আল্লাহ্ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হে আল্লাহ্ তুমি তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর।” এরপর আরেক জন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমার জন্য দু‘আ করুন আল্লাহ্ যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যাপারে উক্কাশা তোমার আগে চলে গেছে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৫৪১)
বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যাবিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা কত হবে এ সম্পর্কেও হাদিসের বিখ্যাত কিছু গ্রণ্তে ওঠে এসেছে কিছু সুস্পষ্ট বর্ণনা।
তাহলো--
সাহ্ল ইব্নু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সত্তর হাজার অথবা সাত লাখ লোক একে অপরের হাত ধরে জান্নাতে দাখিল হবে। বর্ণনাকারীর এ দু’সংখ্যার মাঝে সন্দেহ রয়েছে। তাদের প্রথম থেকে শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সকলেই জান্নাতে দাখিল হবে আর তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় জ্বল জ্বল করতে থাকবে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৫৪৩)
- অন্য বর্ণনায় এসেছে,
শুধু ৭০ হাজারই নয়, বরং ওই ৭০ হাজারের প্রতি হাজারের সঙ্গে আরও ৭০ হাজার করে মুসলিম জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করবে।’ অর্থাৎ এ হিসেবে প্রায় ৪৯ লাখ ব্যক্তি। (সহিহুল জামে)
- এবং আরো অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
ওই ৭০ হাজারের প্রত্যেক ব্যাক্তির সঙ্গে আরও ৭০ হাজার করে মুসলিম জান্নাতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ এ হিসেবে উম্মতে মুহাম্মাদির ৪৯০ কোটি মানুষ বিনা হিসাব ও আজাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(মুসনাদে আহমাদ, সিলসিলা সহিহাহ)
দ্বিতীয় বর্ণনায় উল্লেখিত ৭০ হাজার ব্যক্তির বিনা হিসাবে জান্নাত লাভ অনুসারে মহান আল্লাহর তিন অঞ্জলি অতিরিক্ত মুসলিমকে বিনা হিসাব ও আজাবে জান্নাত প্রবেশের অধিকার দেবেন। আর এর প্রকৃত সংখ্যা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন।
জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দল ও তাদের সম্পর্কে কুরআনুল কারিমের বর্ণনাই সুস্পষ্ট। আল্লাহ তা'আলা এ সম্পর্কে অনেক সুরার একাধিক আয়াতে তা সুস্পষ্ট করে বলেছেন-
وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلْمُقَرَّبُونَ فِى جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ثُلَّةٌ مِّنَ ٱلْأَوَّلِينَ وَقَلِيلٌ مِّنَ ٱلْءَاخِرِينَ
- আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তী। তারাই হবে নৈকট্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে সুখময় জান্নাতসমূহে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
(সূরা আল-ওয়াকিয়াহ (الواقعة), আয়াত: ১০-১৪)
وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ - هَذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍ - مَنْ خَشِيَ الرَّحْمَن بِالْغَيْبِ وَجَاء بِقَلْبٍ مُّنِيبٍ
- আর জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে আল্লাহকে ভয়কারী বান্দার খুব কাছাকাছি। প্রত্যেক অনুগরাী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যে না দেখে দয়াময় আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করত এবং বিনীত অন্তরে উপস্থিত হতো।
(সূরা ক্বাফ (ق), আয়াত: ৩১-৩৩)
আল্লাহ তা'আলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে বিনা হিসাবে জান্নাত পাওয়ার জন্য উল্লেখিত ৩টি আমল যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments