উঁচু কবর ভেঙ্গে সমান করা প্রসঙ্গে হাদিস...।

 উঁচু কবর ভেঙ্গে সমান করা প্রসঙ্গে হাদিস...



কবরের ওপর গম্বুজ নির্মাণের বিধান


এভাবে আমি (মানুষকে) তাদের বিষয়ে জানিয়ে দিলাম, যাতে তারা জানতে পারে যে আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামত বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যখন তারা তাদের কর্তব্যের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল, তখন অনেকে বলল, তাদের ওপর এক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করো। তাদের প্রতিপালক তাদের বিষয়ে ভালো জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হলো তারা বলল, নিশ্চয়ই আমরা তাদের পাশে মসজিদ নির্মাণ করব।

 [সুরা : কাহফ, আয়াত : ২১]


তাফসির : আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, আসহাবে কাহফের ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে কিয়ামত অনিবার্য সত্য বিষয়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অবশ্যই কার্যকর হবে।


এ আয়াত থেকে আরো জানা যায়, আসহাবে কাহফের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এ বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে আসহাবে কাহফের কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণ করা হবে। আয়াতের এ অংশের দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ ওলি-আউলিয়ার মাজার স্থাপন, তাঁদের কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণকে পুণ্যের কাজ মনে করে থাকেন। অথচ এখানে শুধু ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আর ঘটনাটি ছিল আগের ধর্ম তথা খ্রিস্টধর্মের। এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বিবৃত হয়েছে হাদিস শরিফে।

  আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবুল হাইয়্যাজ আসাদি (রা.)-এর উদ্দেশে বলেন, আমি কি আপনাকে এমন কাজের প্রতি উৎসাহিত করব না, যা করার জন্য আমাকে রাসুল (সা.) উৎসাহিত করেছেন? আর তা হলো (মানুষের) ভাস্কর্য না মিটিয়ে রাখবে না এবং উঁচু কবর সমতল না করে ছাড়বে না।

 (মুসলিম, হাদিস : ২১১৫, তিরমিজি : ১০৮৯)


অন্য হাদিসে এসেছে, জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) কবর পাকা করতে, এর ওপর গম্বুজ নির্মাণ করতে এবং কবরের ওপর বসতে নিষেধ করেছেন।’

 (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯৭০)


কবর পাকা করা ও কবরের ওপর গম্বুজ তৈরি করা সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমামরা হারাম হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, ‘কবর খনন করতে যে মাটি কবর থেকে বের করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেওয়া আমরা সঠিক মনে করি না। আমরা কবর পাকা করা ও লেপ দেওয়াকে মাকরুহ মনে করি। ... নবী করিম (সা.) কবর চতুষ্কোণ বানাতে ও পাকা করতে নিষেধ করেছেন। এটাই আমাদের মাজহাব। আর এটাই ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর অভিমত।’

 (কিতাবুল আসার, পৃষ্ঠা ৯৬)


আল্লামা ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) বলেন, ‘(কবরে) বিল্ডিং নির্মাণ বিষয়ে এমন কাউকে দেখিনি, যিনি এর বৈধতা দিয়েছেন।’

  (ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩৭, নতুন সংস্করণ, মিসর)


কাজি সানাউল্লাহ পানিপথি (রহ.) লিখেছেন, ‘আর ওলি-আউলিয়ার কবরের ওপর উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ করা, বাতি জ্বালানো এবং এজাতীয় আরো যা করা হয়, সবই হারাম।’

  (মা-লা-বুদ্দা মিনহু, পৃষ্ঠা ৮৪)


আর কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা দুটি শর্তে বৈধ। এক. যদি ওই কবরস্থান আর কবর দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত না হয়। দুই. কবরস্থানে দাফনকৃত লাশ মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে থাকে। যদি উল্লিখিত উভয় শর্ত পাওয়া যায়, তাহলে ওই স্থানে মসজিদ নির্মাণ বৈধ। যদিও তা অনুচিত। (উমদাতুল কারি : ৩/৪৩৫)


কিন্তু যদি এই দুই শর্তের একটি শর্তও না পাওয়া যায়, তাহলে ওই স্থানে মসজিদ নির্মাণ বৈধ নয়। শর্ত না মেনে এমন জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করা হলে ওই মসজিদে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি। আর বিধানের দিক থেকে মাকরুহে তাহরিমি হারামের নিকটবর্তী।

  (রদ্দুল মুহতার : ৩/১৫৪; তাতারখানিয়া : ২/১৮২)


গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ

No comments

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.