ইসলামে ছবি আঁকা হালাল নাকি হারাম..?
ইসলামে ছবি আঁকা হালাল নাকি হারাম..?
বিসমিল্লাহির’রহ্মানির’রহিম
বর্তমানের নতুন ফিতনা হচ্ছে ছবি, অনেকেই মনে করেন ছবি বৈধ এবং এর জন্য হাদীসের দলীলও দিয়ে থাকেন। কিন্তু তা আদৌ কি ছবি বৈধ হওয়ার দলীল? আমরা জানি রসূল (সাল্লাল্লাহু’আলাইহী’ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বাধিক শাস্তি হবে যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুকরণ করতে চায় এবং বলা হবে তাদের মধ্যে এখন প্রাণ দাও, কিন্তু মানুষ তা পারবে না। ছবি যদি পরবর্তীতে বৈধ হয়ে থাকে তবে আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুকরণ কি শুধু মাটি, পাথর, সিমেন্ট এবং মম দ্বারা মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? কাগজে বা কাপড়ে করলে তা কি শাস্তির যোগ্য নয়? অর্থাৎ আমার বাবা-মায়ের ছবি কাগজে, কাপড়ে এঁকে রাখলে কোন সমস্যা নেই। আমার পীর বাবার ছবি আমার প্রত্যেক ঘরের পর্দায় থাকবে, মসজিদের পর্দায় থাকবে। কতই না ভাল লাগবে তাদের দেখে। ক্বাবা ঘর যা কাল কাপড় দিয়ে ঘিরা তাতে রসূল (সাল্লাল্লাহু’আলাইহী’ওয়াসাল্লাম) এর ছবি আঁকিয়ে রাখা যাবে, ক্বাবা শরীফের মধ্যে ইব্রাহীম (আলাইহিস’সালাম) এর ছবি, যা ধ্বংস করে দেওয়া হয়ে ছিল তা পুনরায় তৈরি করা যাবে, এখন তো মানুষ আর শির্ক করবে না, তাই এর সবই করা যাবে। মক্কার হেরেম শরীফের সকল দিকে নবী, রসূলদের ছবি, ভাবুন কত সুন্দর সেই দৃশ্য। মনে হবে সকল নবী, রসূল যেন মক্কাতেই আছে, আমাদের মাঝেই আছে। আল্লাহ্র লানত যেন হয় সেই সকল লোকদের উপর যারা ছবিকে কাপড়ে এবং কাগজে বৈধ করতে চায়। যারা মক্কা, মদিনা সহরের প্রতিটি প্রান্তে কাপড়ের এবং কাগজের ছবির বিস্তার করতে চায়, যেরূপ মূর্তিতে পরিপূর্ণ ছিল ক্বাবা ঘর, সেরূপ ছবি দ্বারা পরিপূর্ণ করতে চায় ক্বাবা ঘর …(আস্তাগফিরুল্লাহ্)। প্রথমত ছবি কোন কালেই বৈধ ছিল না, এরূপ কোন নির্দেশ আমরা পাই না। বরং আমরা পাই মূর্তি ভাঙ্গার দলীল। কাগজে ছবি ধ্বংস করার দলীল। সুন্দর, মনোরম দৃশ্য দুনিয়ার প্রতি আমাদের মায়া বাড়িয়ে দেয়, ছবির বিধান যখন নাযিল হয় নি তখন এই হাদীস আমরা পাই। তাই ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, এটি ছবির বিধান নাযিল হওয়ার আগের হাদীস। কিন্তু অনেকে এটিকে ছবির বৈধ হওয়ার দলীল হিসেবে পেশ করার অপচেষ্টা করে থাকে।
এখানে রসূল (সাল্লাল্লাহু’আলাইহী’ওয়াসাল্লাম) ছবিটিকে নষ্ট করতে বলেন নি, যেহেতু ছবির বিধান এখনও নাযিল হয় নি। যা আমরা নিম্নের হাদীস থেকে বুঝতে পারি।
হাদীস থেকে আমরা পরিষ্কার যে, পর্দায় ছবি থাকলেও রহমতের ফেরেশতা ঘরে প্রবেশ করে না।
পরবর্তী হাদীস গদী নিয়ে এবং তাতে প্রাণীর ছবি থাকায় কিয়ামতের দিন এর চিত্রকরকে বলা হবে তাতে প্রাণ দিতে। অনেকের দাবি যে, কাপড়ের ওপর ছবি আঁকা পরবর্তীতে বৈধ করা হয়। তাহলে এই শাস্তির বিধানের কি হবে, সব থেকে কঠিন শাস্তির বিধান কি রহিতো হয়ে গিয়েছে? না কখনোই না, এই বিধান রহিতো করার ক্ষমতা কারো নেই। কেননা এটি আল্লাহ্র সাথে সমকক্ষতা করার অপরাধ, এটি একটি কবিরা গুনাহ্, এটি একটি শির্কের গুনাহ্।
উপরোক্ত হাদীস থেকে এটি স্পষ্ট যে, আত্মা সমৃদ্ধ ছবি পর্দায় আঁকা হারাম, আর মূর্তি আঁকারে তো হারাম যা সর্বজন দ্বারা স্বীকৃত। কিন্তু পর্দাতে আত্মা ছাড়া অন্য ছবি আঁকতে কোন দোষ নেই। কেননা তাতে কেউ আল্লাহ্র সাথে সমকক্ষতার জন্য আঁকায় না। তাই ছবিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. আত্মা সমৃদ্ধ প্রাণীর মূর্তি বা ছবি, ২. নক্সা, ৩. প্রকৃতি (গাছপালা)।
প্রথম প্রকার সর্ব ক্ষেত্রে হারাম, কিন্তু জরুরী এবং বাদ্ধতা মূলক অবস্থায় অপারগতার জন্য হালাল।
আল্লাহ্ কুরআনে বলছেন,
مَن كَفَرَ بِٱللَّهِ مِنۢ بَعْدِ إِيمَٰنِهِۦٓ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُۥ مُطْمَئِنٌّۢ بِٱلْإِيمَٰنِ وَلَٰكِن مَّن شَرَحَ بِٱلْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ ٱللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
(অনুবাধ),
- যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি…
[সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ১০৬]
অন্ত্র আল্লাহ্ বলছেন,
وَمَا لَكُمْ أَلَّا تَأْكُلُوا۟ مِمَّا ذُكِرَ ٱسْمُ ٱللَّهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلَّا مَا ٱضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ وَإِنَّ كَثِيرًا لَّيُضِلُّونَ بِأَهْوَآئِهِم بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِٱلْمُعْتَدِينَ
(অনুবাদ),
- কোন কারণে তোমরা এমন জন্তু থেকে ভক্ষণ করবে না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, অথচ আল্লাহ ঐ সব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন; কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল, যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও। অনেক লোক স্বীয় ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা না জেনে বিপথগামী করতে থাকে। আপনার প্রতিপালক সীমাতিক্রম কারীদেরকে যথার্থই জানেন…
[সূরা আল আনআম (الانعام), আয়াত: ১১৯]
যেহেতু, পরিচয় পত্র বহন করতে আমরা বাধ্য তাই ইনশাআল্লাহ্ এরূপ ছবির জন্য আমাদের আল্লাহ্ পাকড়াও করবেন না।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রকার ছবি হচ্ছে, নক্সা এবং গাছপালা। আর এরূপ ছবি আঁকা বৈধ। সাহাবীরা (রাদীয়াল্লাহু’আনহুমা) মনে করে ছিলেন এরূপ নক্সা এবং গাছপাল আঁকাও অবৈধ। তাই এর বৈধতা সম্পর্কে আমরা হাদীস পাই।
একই রূপ অন্য হাদীসে আমরা পাই
আল্লাহ্ যেন আমাদের সফলতা দান করেন এই দুনিয়াতে এবং আখেরাতে। সালাম এবং দরূদ বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ এর উপর, তার পরিবার এবং সাথীদের উপর।
No comments