ছবি হালাল এবং হারাম হওয়ার বিষয় বস্তু


ছবি হালাল এবং হারাম হওয়ার বিষয় বস্তু

কোন ব্যপারে ছবি হালাল এবং কোন ব্যপারে ছবি হারাম

ইসলামে ছবি আঁকা হালাল নাকি হারাম..?


আমি আমার লেখা শুরু করার আগেই বলে নিই আমি একজন মানুষ তাই আমারও ভুল থাকতে পারে। তাই আমার লেখায় যদি কোথাও কোনো ভুল পান, হোক সেটা বানান ভুল কিংবা আমার কথা বা মতবাদে কোনো ভুল তাহলে সেটা দয়া করে ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং আমার সেই ভুলটাকে ধরিয়ে দিবেন যেনো আমি পরবর্তীতে ভুলটা শুধরে নিতে পারি।


আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা পশু-পাখি বা পছন্দের কোনো নায়ক-নায়িকাদের ছবি বাড়িতে টাঙিয়ে রাখতে পছন্দ করি। কিংবা নিজেদেরই কারো ছবি বাড়ির দেয়ালে টাঙিয়ে রাখি সৌন্দর্যের জন্য। কিংবা কারো সৃতি হিসেবেও অনেকের ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখি। আবার আমরা অনেকেই আছি যারা ছবি  আঁকতেও পছন্দ করি। কিন্তু আমরা কি জানি এগুলো ইসলামে বৈধ কি-না!? তাহলে চলুন দেখেসি এব্যাপারে ইসলাম কি বলে..?

আওন ইব্‌নু আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতাকে দেখেছি, তিনি এক গোলাম খরিদ করেন যে শিঙ্গা লাগানোর কাজ করত। তিনি তাঁর শিঙ্গার যন্ত্রপাতি সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন এবং তা ভেঙ্গে ফেলা হল। আমি এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, নবী (সাঃ) কুকুরের মূল্য এবং রক্তের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, আর দেহে দাগ দেয়া ও নেয়া হতে নিষেধ করেছেন। সুদ খাওয়া ও খাওয়ানো নিষেধ করেছেন আর ছবি অঙ্কনকারীর উপর লা’নত করেছেন।
   (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০৮৬)

   রক্ত মোক্ষণ করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার অবৈধতা পরবর্তীতে উল্লেখিত হাদীস দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে। চিত্র অঙ্কনকারী বলতে জীবসম্পন্ন প্রাণীর চিত্র অঙ্কনকারী বুঝানো হয়েছে যা অন্য হাদীস দ্বারা আমরা জানতে পারি। কোন প্রাণীর চিত্র অঙ্কন করা হারাম।

উম্মুল মু'মিনীন 'আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি একটি ছবিওয়ালা বালিশ ক্রয় করেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখতে পেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি ভাব দেখতে পেলাম। তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে তওবা করছি।  আমি কি অপরাধ করেছি?  তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ বালিশের কী ব্যাপার? 'আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমি এটি আপনার জন্য ক্রয় করেছি, যাতে আপনি টেক লাগিয়ে বসতে পারেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই ছবি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামাতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যা তৈরী করেছিলে, তা জীবিত কর। তিনি আরো বলেন, যে ঘরে এ সব ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না।
   {(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২১০৫) ২১০৫, ২৪৭৯, ৩২২৪, ৩২২৬, ৩৩৫১, ৩৩৫২, ৩৮৭৩, ৫১৮১, ৫৯৫১, ৫৯৫২, ৫৯৫৩, ৫৯৫৪, ৫৯৫৫, ৫৯৫৭, ৫৯৫৮, ৫৯৫৯, ৫৯৬০, ৫৯৬১, ৫৯৬২, ৫৯৬৩, ৬১০৯৭৫৫৭, ৭৫৫৮)

মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরূকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরূক ইয়াসারের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‌’ঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন যে, (ক্বিয়ামাতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।
   (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৫০)
[মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, ৭৫৫৮, ৭৫৫৯, আহমাদ ৩৫৫৮, ৯০৮৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)

   প্রাণীর ছবি আঁকা নিষিদ্ধ। প্রাকৃতিক দৃশ্য বা জড় বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে লোক এমন স্বপ্ন দেখার ভান করল যা সে দেখেনি তাকে দু’টি যবের দানায় গিট দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে তা কখনও পারবে না। যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল। অথচ তারা এটা পছন্দ করে না অথবা বলেছেন, অথচ তারা তার থেকে পলায়নপর। ক্বিয়ামাতের দিন তার উভয় কানে সীসা ঢেলে দেয়া হবে। আর যে কেউ প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাতে প্রাণ ফুঁকে দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। কিন্তু সে প্রাণ ফুঁকতে পারবে না। সুফ্ইয়ান বলেছেন, আইউব এ হাদীসটি আমাদেরকে মওসুল রূপে বর্ণনা করেছেন।

কুতাইবাহ (রহঃ) বলেন, আবূ আওয়ানা (রহঃ).....আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে তাঁর উক্তি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি নিজের স্বপ্ন মিথ্যা বর্ণনা করে।
শু’বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে তাঁর উক্তি বর্ণনা করেন, যে কেউ ছবি আঁকে.....যে কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে.....যে কেউ কান লাগায়.....।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, (তিনি বলেন) যে কেউ কান লাগাবে…..যে কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে.....যে কেউ ছবি আঁকবে.....অবশিষ্ট হাদীস একই রকম বর্ণনা করেছেন.....। হিশাম (রহঃ) ইকরামাহ থেকে ইব্‌নু ‘আব্বাস সূত্রে খালিদ এর অনুসরণ করেছেন। [১৫২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৬)
   (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭০৪২)

এই হাদীসটিতে তিনটি হুকুম শামিল রয়েছে, যথা :

(১) মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা
(২) যে ব্যক্তি চায়, তার কথা কেউ শ্রবণ না করুক এমন কথা শ্রবণ করা এবং
(৩) ছবি সংক্রান্ত।

ইমাম ত্ববারী মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, এ ব্যাপারে শাস্তি দেয়ার ওয়াদা তীব্র হয়েছে। অথচ সজাগ থাকা অবস্থায় মিথ্যা বলা কখনও কখনও তার চাইতে অধিকতর মারাত্মক অন্যায়। যেমন : হত্যা, হাদ্দ অথবা সম্পদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া। কারণ স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যারোপ যেন আল্লাহর উপরেই মিথ্যারোপ করা যে আল্লাহ তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন অথচ তা সে দেখেনি। আর আল্লাহর উপর মিথ্যা বলা সৃষ্টিকুলের উপর মিথ্যা বলার চাইতে অধিকতর গুরুতর।

এর প্রমাণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

{وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ} (هود: من الآية১৮)

আর স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যা বলা যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উপরেই মিথ্যা বলা।
তার প্রমাণ, রাসূল (সাঃ) বলেন, الرؤيا جزء من النبوة সুতরাং যা নবুওয়াতের অংশ তা তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হবে।

সা’ঈদ ইব্‌নু আবুল হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়ে) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরী করে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এই কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসের প্রাণ নেই, তা তৈরী করতে পার। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ঈমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, সা’ঈদ (রাঃ) বলেছেন, আমি নযর ইব্‌নু আনাস (রাঃ) হতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করার সময় আমি তার কাছে ছিলাম। ঈমাম বুখারী (রহঃ) আরো বলেন, সা’ঈদ ইব্‌নু আবূ আরুবাহ (রহঃ) একমাত্র এ হাদীসটি নযর ইব্‌নু আনাস (রহঃ) হতে শুনেছেন।
   (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২২২৫)

‘আউন ইবনু আবূ জুহায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে দেখেছি যে, তিনি একটি শিঙ্গা লাগানেওয়ালা গোলাম কিনলেন। তিনি তার শিঙ্গা লাগানোর যন্ত্র ভেঙ্গে ফেলতে নির্দেশ দিলে তা ভেঙ্গে ফেলা হল। আমি তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) রক্তের মূল্য, কুকুরের মূল্য, দাসীর (ব্যভিচারের মাধ্যমে) উপার্জন করা হতে বারণ করেছেন। আর তিনি শরীরে উল্কি অঙ্কনকারী ও উল্কি গ্রহণকারী, সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার উপর এবং (জীব জানোয়ারের) ছবি অঙ্কনকারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন।
   (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২২৩৮)

আবূ ত্বালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে বাড়িতে কুকুর থাকে আর প্রাণীর ছবি থাকে সেথায় ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
   (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩২২৫)
  (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৪০৪, ৫৪০৭, ৫৪০৮)

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সঙ্গে বাদ্‌রে যোগদানকারী সাহাবী আবূ ত্বল্‌হা (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি থাকে সে ঘরে (রাহমাতের) মালাক প্রবেশ করেন না। ইব্‌নু ‘আব্বাসের মতে ছবির অর্থ প্রাণীর ছবি। [৩২২৫] (আ.প্র. ৩৭০৫, ই.ফা. ৩৭০৯)
   {(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪০০২,), ৩২২৭, ৩৩২২, ৫৯৪৯}

   অত্র হাদীস দ্বারা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, যে বাড়ীতে কুকুর পালা হয় কিংবা যে ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে রহমাতের মালাক প্রবেশ করে না। শুধুমাত্র শিকারী কুকুর পোষা জায়িয তবে তাকে বাড়ির বাইরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যেন সে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ না করে। ঘরের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি তা মূর্তি বা পুতুল হোক কিংবা ঘরের বাথরুমের দেয়ালে অংকণ করা হোক তা রাখা হচ্ছে অবৈধ কাজ। ছবি বা মূর্তির ব্যবসা সন্দেহাতীতভাবে হারাম, তা মসুলিমদের কাছে বিক্রির জন্য হোক আর কাফিরদের নিকট বিক্রির জন্য হোক। যারা কাফিরদের অনুসরণ করে নিজেদেরকে আধুনিক হিসেবে জাহির করার জন্য এহেন জঘন্য ও নোংরা কাজ করে তারা মূলত আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল এবং তাদের নির্দেশের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে।

আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন (জীবের) প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উচূ ক্ববর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে। (ই.ফা. ২১১২, ই.সে. ২১১৫)
   {(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২১৩৩) ২১৩৪}

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উম্মু হাবীবাহ্ ও উম্মু সালামাহ্ (রসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর দু’ স্ত্রী) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এমন একটি গীর্জার বর্ণনা দিলো যার মধ্যে মূর্তি বা ছবি যা তারা হাবশায় দেখেছিলেন। তাদের কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তারা এরূপই করে থাকে। তাদের মধ্যেকার কোন নেক লোক মারা গেলে তারা তার ক্ববরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে এবং তার মধ্যে ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে। ক্বিয়ামাতের দিন এরা হবে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (ই.ফা. ১০৬২, ই.সে. ১০৭০)
  (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০৬৮)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাইমূনাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, একদিন রসূলুল্লাহ (সাঃ) বিমর্ষ অবস্থায় সকালে উঠলেন। তখন মাইমূনাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আজকে আপনার চেহারা মুবারাক বিষন্ন দেখছি। রসূলুল্লাহ  (সাঃ)  বললেনঃ জিব্রীল (‘আঃ) আজ রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার করেছিলেন, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। জেনে রাখ আল্লাহ্‌র কসম! তিনি (কক্ষনো) আমার সঙ্গে ওয়া‘দা খিলাফ করেননি। পরে রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সে দিনটি এভাবেই কাটালেন। এরপর আমাদের পর্দা (ঘেরা খাট) এর নিচে একটি কুকুর ছানার কথা তাঁর স্মরণ হলো। তিনি নির্দেশ করলে সেটি বের করে দেয়া হলো। অতঃপর তিনি তাঁর হাতে সামান্য পানি নিয়ে তা ঐ (কুকুর শাবক বসার) স্থানে ছিটিয়ে দিলেন। অতঃপর সূর্যাস্ত হলে জিব্রীল (‘আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। সে সময় তিনি তাঁকে বললেন, আপনি তো গত রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমরা (ফেরেশ্তারা) সে সকল গৃহে প্রবেশ করি না যে সকল গৃহে কোন কুকুর থাকে। অথবা কোন (প্রাণীর) ছবি থাকে। অতঃপর নবী (সাঃ) সেদিন সকাল বেলায় কুকুর নিধনের নির্দেশ দিলেন। এমনকি তিনি ছোট বাগানের (পাহারাদার) কুকুরও মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বড় বড় বাগানের কুকুরগুলোকে মুক্তি দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ৫৩৩৫, ই.সে. ৫৩৫২)
  (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৪০৬)

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট (হুজরায়) আসলেন। সে সময় আমি একটি মসৃণ বস্ত্রের পর্দা লাগিয়ে রেখেছিলাম, যাতে কোন ছবি ছিল। যার দরুন তার চেহারা বিমর্ষ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি পর্দাটি হাতে নিয়ে তা ছিঁড়ে ফেললেন; তারপর বললেনঃ কিয়ামতের দিবসে ভয়ঙ্কর শাস্তি ভোগকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ওরাও থাকবে, যার আল্লাহ্‌র সৃষ্টির সাথে তুলনা কার্যে অগ্রসর হয়। (ই.ফা. ৫৩৪৫, ই.সে. ৫৩৬৩)
  {(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৪১৮) ৫৪২১}

   উপরের এই হাদিস গুলোর দ্বারা আমরা জানতে পারি যে, বাড়িতে কোনো প্রাণীর ছবি টাঙিয়ে রাখা যাবে না এখন সেটা সৌন্দর্যের জন্যই হোক কিংবা কারো সৃতির জন্য। আর সেটা মানুষেরই হোক, বা অন্য কোনো পশু-পাখির ছবিই হোক, মোট কথায় প্রাণ আছে এমন কোনো বস্তুর ছবি বাড়িতে ঝুলিয়ে রাখা জায়েজ নেই। এতে বাড়িতে আল্লাহর রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করেনা।
কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ির সৌন্দর্যের জন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য বা ঘর-বাড়ী গাছ-পালার ছবি অর্থাৎ প্রাণ নেই এমন কোনো বস্তুর ছবি বাড়িতে টাঙিয়ে রাখতে পারি যেটা ইসলমে জায়েজ আছে।

এবং কোনো প্রাণীর ছবিও আঁকা যাবে না। তবে আমরা চাইলে এমন কোনো ছবি আঁকতে পারি যেটা কোনো প্রাণীর নয়। যেমনঃ - প্রাকৃতিক দৃশ্য বা ঘর-বাড়ী গাছ-পালার ছবি অর্থাৎ প্রাণ নেই এমন কোনো বস্তুর ছবি আঁকতে পারি যেগুলো ইসলামে জায়েজ আছে।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের এই আমল গুলো পালন করার তৌফিক দান করুক, আমিন।


আমি অবশেষে একটি কথা বলে নিতে চাই তা হলো, আমিও আপনাদের মতোই একজন সাধারণ মানুষ তাই আমারও ভুল থাকতে পারে। তাই আমার লেখায় যদি কোথাও কোনো ভুল পান, হোক সেটা বানান ভুল কিংবা আমার কথা বা মতবাদে কোনো ভুল তাহলে সেটা দয়া করে ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং আমার সেই ভুলটাকে ধরিয়ে দিবেন যেনো আমি পরবর্তীতে ভুলটা শুধরে নিতে পারি।

No comments

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.