সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় নামায পড়া যায় না কেন?


সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় নামায পড়া যায় না কেন?


আনিসুর রহমান

মিরপুর, ঢাকা।


সূর্যাস্তের সময় ও সূর্য উদয়ের সময় এবং ঠিক দুপুরের সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ কেন?


উত্তর : নামায ইসলামের অন্যতম একটি মৌলিক স্তম্ভ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনেক বড় একটি মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে প্রায় বিরাশি জায়গায় নামাযের কথা বলা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, নামাযে দাঁড়ালে আমার দেহ মন জুড়িয়ে যায়, আমার চোখ শীতলতা পায়।

দিন রাতে সব মিলিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া ফরয। এছাড়া আরো কিছু ফযীলতপূর্ণ নফল নামাযের কথা হাদীসে উল্লেখ আছে। দিন বা রাতের বিভিন্ন মুহূর্তে তা আদায় করা হয়ে থাকে। এর বাইরে একজন মুসলিম যত খুশি ব্যক্তিগত নফল নামায আদায় করতে পারে। যার কোনো সীমারেখা নির্ধারিত নেই।তবে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কিছু সময় এমন আছে যখন নামায পড়া একদম হারাম। নিচে এ সময়গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

আপনি যখনি ঘুম থেকে জেগে উঠবেন তখনি আপনার জন্য ফজর নামাজ এর সময় শুধু মাত্র সূর্যোদয় এর সময়টুকুতে নামাজ আদায় করা যাবে না। কারন তখনকার মুসরিকগণ সূর্যের পূজা করত। তাই সূর্যাস্তের সময় তারা সূর্য কে সিজদা করত। তাই ওই সময় যদি কোন মুসলিমরা নামাজ আদায় করত তাহলে মুসরিকরা ভাবত মুসলিমরা সূর্যের পূজা করছে।

সাহাবী উকবা বিন আমের জুহানী (রা.) বলেন, তিনটি সময়ে রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে নামায পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়।
   [সুবুলুস সালাম ১/১১১, সহীহ মুসলিম ১/৫৬৮]

এই হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী নামাযের নিষিদ্ধ সময় তিনটি।
১. সূর্য যখন উদিত হতে থাকে এবং যতক্ষণ না তার হলুদ রঙ ভালোভাবে চলে যায় ও আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরজন্য আনুমানিক ১৫-২০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।
২. ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়; যতক্ষণ না তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ে।
৩. সূর্য হলুদবর্ণ ধারণ করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
উল্লিখিত তিন সময়ে সব ধরণের নামায পড়া নিষেধ। চাই তা ফরয হোক কিংবা নফল। ওয়াজিব হোক বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এ সময়ে শুকরিয়ার সিজদা এবং অন্য সময়ে পাঠকৃত তিলাওয়াতের সিজদাও নিষিদ্ধ। তবে এই সময়ে জানাযা উপস্থিত হলে বিলম্ব না করে তা পড়ে নেয়া যাবে।

অন্য হাদিসে এই সময়ে নামাজ নিষেধ হওয়ার কারণ হিসেবে রাসূল (সাঃ) দুইটি কারণ বলেছেন।

এক: এই সময় মূর্তিপূজকরা পূজা করে।সূর্য পূজারিরা সূর্যের পূজা। কাফেররা এই সময় তাদের দেবদেবীর ইবাদত করে।

দুই: এই সময় শয়তান সূর্যের সামনে এসে বসে থাকে।এবং কাফেররা সূর্যের সিজদা করে। তাই তখন নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

নিচে হাদিসের ইবারত দেয়া হল:
إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ, وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ، مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ، وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَق، وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ الْأَوْسَطِ، وَوَقْتُ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ، فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاةِ، فَإِنَّهَا تَطْلُعْ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ.
وفي رواية لمسلم: صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ، فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ، ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ، فَإِنَّ حِينَئِذٍ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ، فَإِذَا أَقْبَلَ الْفَيْءُ فَصَلِّ، فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ.

জবাব দিয়েছেন মুফতি রিয়াজুল ইসলাম
শিক্ষক, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ ঢাকা।

শেয়ার করুন


আমি অবশেষে একটি কথা বলে নিতে চাই তা হলো, আমিও আপনাদের মতোই একজন সাধারণ মানুষ তাই আমারও ভুল থাকতে পারে। তাই আমার লেখায় যদি কোথাও কোনো ভুল পান, হোক সেটা বানান ভুল কিংবা আমার কথা বা মতবাদে কোনো ভুল তাহলে সেটা দয়া করে ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং আমার সেই ভুলটাকে ধরিয়ে দিবেন যেনো আমি পরবর্তীতে ভুলটা শুধরে নিতে পারি।

No comments

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.